বাংলাদেশেও জিকা ভাইরাস, আতঙ্ক নয়, সতর্ক থাকুন

Zika Virus in Banglades

বাংলাদেশে্ও পা্ওয়া গেছে জিকা ভাইরাসের অস্তিত্ব । চট্টগ্রামে ৬৭ বছরের এক বৃদ্ধ ব্যক্তির পুরনো রক্তের নমুনায় জিকা ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।  ২২ মার্র্চ সচিবালয়স্থ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য প্রকাশ করেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা জিকা ভাইরাস নিয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। ওই ঘোষণার পর থেকে এ বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ সরকার। আমাদের দেশে জিকা ভাইরাস নেই, এ কথা বলা যাবে না। চট্টগ্রামের এক ব্যক্তির রক্তে জিকা ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। তিনি এখন সুস্থ আছেন এবং তার পরিবারের কেউ জিকায় আক্রান্ত হননি। এটি প্রাণঘাতী ভাইরাস নয়।

সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হক, রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান এবং সিডিসির পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল খায়ের মোহাম্মদ শামছুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। তারা জিকা ভাইরাস ও ডেঙ্গুর ভাইরাস সম্পর্কিত তথ্য তুলে ধরেন। বলেন, গত ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা জিকার কারণে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার পর আইইডিসিআরে সংরক্ষিত থাকা রক্তের নমুনা ফের পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরপরই ২০১৪ সালের মে মাস থেকে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে সংগৃহীত ১ হাজার ৭০টি রক্তের নমুনার মধ্য থেকে দ্বৈবচয়ন পদ্ধতিতে ১০১টি নমুনার ফের পরীক্ষা চালানো হয়। সেখানে একজনের রক্তের নমুনায় জিকা ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তবে, তার পরিবারের সদস্যরা সুস্থ আছেন। আক্রান্ত ব্যক্তি কোনো দিন বিদেশে যাননি বিধায় তিনি দেশেই জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। জিকা শনাক্তের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর ঢাকা থেকে চিকিৎসকদের একটি দল চট্টগ্রামে ছুটে যায়। দলটি ১৬৯টি বাড়ি ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে জিকা নিয়ে এখনই শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ ঘটেনি। তবে এ ভাইরাস ঠেকাতে মশা নিয়ন্ত্রণে জোর দিতে হবে। এজন্য বাড়ির যে কোনো স্থানে পানি জমা থাকতে দেওয়া যাবে না।

জিকা ভাইরাস আক্রান্তের লক্ষণ

সাধারণভাবে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সাথে সাথে কোন লক্ষণ প্রকাশ পায়না। এমনকি রোগী বুঝত্ওে পারেনা সে জিকায় আক্রান্ত কিনা। জিকায় আত্রান্ত হলে সাধারণ নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে।

  • জ্বর, শরীরে লাল ফুসকুরি, শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা, মাথা ব্যথা ইত্যাদি। তবে, আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথেইতো এই রোগের লক্ষণগুলো দেখা দেয়না। এসব লক্ষনগুলো থাকলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
  • কোন গর্ভবতী মা এই ধরনের লক্ষণগুলো দেখলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। বিশেষ করে তিনি যদি এমন কো্ন এলাকায় বেড়াতে গিয়ে বা বেড়িয়ে এসে দেখেন দুই সপ্তাহের মধ্যে দেখেন তার জ্বর, মাথা ব্যথা, শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা হচ্ছে।
  • জিকা ভাইরাস বহনকারি মশার কামড় থেকেই এই রোগ হয়ে থাকে। আবার আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তের মাধ্যমে্ও এই ভাইরাস ছড়ায়। তাই মশার আক্রমন থেকে নিজেকে সামলে রাখতে হবে।
  • এই রোগের আক্রান্ত হলে সাধারনত হাসপাতালে যেতে হয়না। একারণে অনেকে এটিকে গুরুত্ব দেয়না। কিন্তু এটি নিরবে অনেক ক্ষতি করে। বিশেষ করে গর্ভবতি মায়েদের এবং অনাগত সন্তানের অনেক বড় ক্ষতি করে।
  • এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার অনাগত শিশুর মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট হতে পারে, মস্তিষ্কের গঠনও অপূর্ণ থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে গর্ভবতীদের সতর্ক থাকতে হবে।

আক্রান্ত হলে কি করবেন

জিকা ভাইরাস থেকে রক্ষা পা্ওয়ার মত কোন ভেকসিন এখনো আবিস্কার হয়নি। তাই এই রোগের রোগের চিকিৎসা অনেকটাই ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসার মতই।

  • পর্যাপ্ত পরিমানে বিশ্রাম নিতে হবে
  • প্রচুর পরিমানে তরল খাবার খেতে হবে
  • জ্বর ও ব্যথা কমাতে সাধারণ প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেতে হবে
  • কোন অ্যাসপাইরিন জাতীয় ওষুধ খাওয়া যাবেনা
  • অন্যকোন রোগের জন্য ওষুধ খেতে হলে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শৃ করে নিতে হবে।

সবচেয়ে বড় কাজ মশা থেকে দূরে থাকা । মশা নিয়ন্ত্রণ করা। এজন্য বাড়ির আঙিনায় পানি জমে থাকে এমন পাত্র না থাকা, ময়লা আবর্জৃনা পরিস্কার করা, পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করা।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*


11 + nineteen =