রোজায় ইফতারিতে খেজুর যেন এক অত্যাবশ্যক খাদ্য। এটি না হলে যেন ইফতারই অপূর্ণ থেকে যায়। বিশেষ করে বাংলাদেশে রোজার মাসে খেজুরের চাহিদা বেড়ে যায় শতগুনের বেশি। এর কারণ কী? কেন রোজায় মানুষ খেজুর এত বেশি পছন্দ করে? এটি কী শুধুই ধর্মীয় কারণে নাকি এর অন্য কারণ আছে? খেজুরের উপকারিতাই বা কী। চলুন জেনে নেই।
ধর্মীয় কারণ
রোজায় মানুষ ইফতারিতে খেজুর এত বেশি পছন্দ করার প্রধান কারণ ধর্মীয়। হাদিস থেকে যেটি পাওয়া যায় তাতে দেখা যায় আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) রোজা ভাঙার সময় অর্থাৎ ইফতারিতে খেজুর খেতেন। আর ইসলাম ধর্মে নবীর নিয়ম এবং আদর্শ অনুসরণ করা যেহেতু সুন্নত এবং সওয়াবের কাজ তাই মুসলমানরা খেজুর দিয়ে সাধারণত ইফতার শুরু করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির অধ্যাপক খাদেমুল ইসলাম বলেন, “ মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) রোজা ভাঙার সময় অর্থাৎ ইফতারে খেজুর খেতেন। তাই এটি ইফতারের ভাল অনুষঙ্গ। তাই খেজুর দিয়ে ইফতার করাকে বাংলাদেশর মানুষ সুন্নত হিসেবে মনে করেন।”
তবে, হাদিসে এমন কোন কথা নেই খেজুর দিয়েই রোজা ভাঙতে হবে।
রোজার মাসেই মুলত বাংলাদেশে খেজুরের চাহিদা থাকে বেশি। অন্য সময় তেমন একটা চাহিদা নেই। কারণ এটি মোটেও বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাসের খাদ্য উপাদান নয়। এজন্য এটি নি:সন্দেহে বলা যায় ধর্মীয় কারনেই এদেশে খেজুর বেশি খায় মানুষ।
মধ্যপ্রাচ্যসহ আরব বিশ্বের মানুষও রোজায় খেজুর খায়। এবং বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি খেজুর খায়। কারণ এটি তাদের খাদ্যাভ্যাসের মধ্যেই পড়ে।
বৈজ্ঞানিক কারণ ও খেজুরের পুষ্টিগুন
খাদ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, খেজুরের পুষ্টিগুন অনেক। কারণ খেজুরে আছে প্রচুর পরিমানে গ্লুকোজ বা সুগার যা শরীরে খুব দ্রুত শক্তি যোগায়। এজন্য এক কামড় খেজুরে অনেক এনার্জি পাওয়া যায় বলে জানাচ্ছেন ভারতের একদল খাদ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ।
এছাড়া খেজুরে আছে প্রচুর পরিমান আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, গ্লুকোজ,ফাইবার ও শুক্রোজ। এজন্য খেজুর থাওয়ার আধা ঘন্টার মধ্যে শরীর চাঙ্গা হয়ে যায় এবং শরীরে শক্তি ফিরে আসে। তাই রোজাদারদের শরীরে এটি দ্রুত শক্তি যোগাতে সাহায্য করে।
এসিডি দূর করে
রোজা থাকলে বা পেট খালি থাকলে অনেক সময়েএসিডিটি বাড়তে পারে। খেজুর খেলে সেই এসিডিটি অনেকটা কমে যায়।
বেশি খাওয়া নিয়ন্ত্রণ ও হজমে সাহায্য করে
সারাদিন রোজা রাখলে যেহেতু পেটে প্রচুর ক্ষুধা থাকে তাই ইফতারের পর বেশি খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। খেজুরে থাকা জটিল কার্বোহাইড্রেট ও ফাইবার যেহেতু সহজে হজম হয়না। তাই এটি খেলে ক্ষুধা কম অনুভব হয়। তাই বেশি খাওয়ার আগেই পেট ভরে যায়।
দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলে অনেক সময় কোষ্টকাঠিন্য হতে পারে। খেজুর খেলে এটি দূর হয়। এছাড়া সারদিন না খেয়ে থাকার ফলে শরীরে যেসব খারাপ কোলস্টরেল জমা হয় তাকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে খেজুরের খাদ্য উপাদান।
চাঙ্গা থাকতে সারা বছর খেজুর খান
গরম কিংবা ঠান্ডাজনিত জ্বর বা সংক্রামক জ্বর, কণ্ঠনালির ব্যথা বা ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা, শ্বাসকষ্টের বিরুদ্ধে লড়াই করে খেজুর। খেজুরে প্রচুর পুষ্টিগুণ থাকায় শরীর সুস্থ রাখতে শুধুমাত্র রমজান মাসে নয়, সারা বছরই খাদ্য তালিকায় খেজুর থাকা দরকার। নিয়মিত খেজুর খেলে আপনার চেহারায় বলিরেখা আসার সময় কিছুটা মন্থর করতে পারে। এতে চেহারার উজ্জলতা আরো বাড়বে।
Be the first to comment