ষোড়শ সংশোধনী রায়ের অপ্রাসঙ্গিক অংশ বাদ দিতে চায় সরকার: আইনমন্ত্রী

আনিসুল হক, আইনমন্ত্রী

বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাত  থেকে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের হাতে ফিরিয়ে দেয়া ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের অগ্রহণযোগ্য ও অপ্রাসঙ্গিক অংশ বাদ দেয়ার উদ্যোগ নেবে সরকার। এমন কথা জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তবে, কোন প্রক্রিয়ায় সেটি সম্ভব তা বলেননি আইনমন্ত্রী।

আপিল বিভাগের ওই পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের দশ দিনের মাথায় সরকারের প্রতিক্রিয়ায় কথা বলেন আইনমন্ত্রী।

আইনমন্ত্রী বলেন, “আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি, মাননীয় প্রধান বিচারপতির রায়ে আপত্তিকর ও অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য আছে, সেগুলো এক্সপাঞ্জ করার উদ্যোগ আমরা নেব।”

আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধান বিচারপতি জাতীয় সংসদ সম্পর্কে কটূক্তি করেছেন। এই প্রতিষ্ঠানকে হেয়প্রতিপন্ন করেছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা কোনো একক ব্যক্তির কারণে হয়নি বলে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, তাতে তিনি মর্মাহত।

আনিসুল হক বলেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পদ্ধতি অত্যন্ত অস্বচ্ছ ও নাজুক। তবে তিনি এও বলেন, ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে সংসদ বিচার বিভাগের সঙ্গে কোনো পাওয়ার কনটেস্টে অবতীর্ণ হয়নি।

এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, রায়ের পরপরই তড়িঘড়ি করে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বৈঠক ডাকা দুঃখজনক।

এই রায়ে রিভিউ করার বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যেহেতু এই রায়ে সংক্ষুব্ধ, তাই আমরা নিশ্চয়ই চিন্তাভাবনা করছি যে এই রায়ে রিভিউ করা হবে কি না। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হইনি। কারণ, রায়ের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো এখনো নিবিড়ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা

উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের যে পরিবর্তন ষোড়শ সংশোধনীতে আনা হয়েছিল, হাই কোর্ট গতবছর তা ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে।

আপিল বিভাগ গত ৩ জুলাই সরকারের আপিল খারিজ করে দিলে সামরিক সরকারের চালু করা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান ফিরে আসে।

গত ১ অগাস্ট প্রকাশিত আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা দেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা করেন।

ওই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশ যেহেতু প্রজাতন্ত্র, সেহেতু জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী সংসদের কাছে বিচারকদেরও জবাবদিহিতা থাকার কথা। কিন্তু ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের ফলে তা আর থাকল না।

রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বক্তব্যেরও সমালোচনা করে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক।

“অনারেবল চিফ জাস্টিস যদি বলেন, পার্লামেন্ট ইজ ইমম্যাচিউর বা সংসদ সদস্যরা অপরিপক্ক, তাহলে তো আমাকে বলতে হয়, অভিয়াসলি লজিক্যালি চলে আসে, সুপ্রিম কোর্টের জজ সাহেবরাও তাহলে ইমম্যাচিউর।”

 

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*


3 × three =